হংকংয়ের সংসদে দেশটির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন একটি আইন পাস হয়েছে। ‘বিতর্কিত’ এই আইনের আওতায় দেশটিতে কেবল ‘দেশপ্রেমিক’ ব্যক্তিরাই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষ ভোটে নাগরিকদের সংসদ সদস্য নির্বাচনের আওতাও কমানো হয়েছে। বিপরীতে বেইজিংপন্থী কমিটির এখতিয়াকে সংসদ সদস্য নির্বাচনের আওতা বাড়ানো হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, চীনের আধিপত্য আরও প্রবল করতেই হংকংয়ে নতুন এই পাস করা হয়েছে। চিনবিরোধী ও হংকংয়ের স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই আইনটি করা হয়েছে। আইনটিকে গণতন্ত্রের মৃত্যু বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। টাইম ম্যাগাজিনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) হংকং সংসদে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কিত আইনটি পাস হয়েছে ৪০-২ ভোটে।
হংকং সংসদে বেইজিংপন্থীদের আধিপত্য থাকায় বলতে গেলে বিনা বাধায় আইনটি পাস হয়েছে। নতুন এই আইনে হংকংয়ের নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের পরিচয় অনুসন্ধানের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের ওপর। এই বিভাগের অধীনে একটি কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। ওই কমিটি নিশ্চিত করবে, নির্বাচনে অংশ নিতে যোগ্য প্রার্থীরা ‘দেশপ্রেমিক’ কি না। ‘দেশপ্রেমিক’ না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না।
নতুন এই আইনে হংকং সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৪০টি আসনেই প্রার্থী নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিটি, যেটি অনেকাংশে বেইজিংপন্থীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। এছাড়া এর আগে হংকংয়ের ৩৫টি আসনে ভোটাররা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারতেন। এখন তারা মাত্র ২০ জন সংসদ সদস্যকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করতে পারবেন।
বুধবার (২৬ মে) বিলটি হংকং সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরপর এটি নিয়ে বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে। বেইজিংপন্থী আইনপ্রণেতারা এই আইনের পক্ষে ব্যাপক উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। তারা বলছেন, যারা হংকংয়ের প্রতি ‘নিবেদিত’ নন, এই আইন তাদের কাছ থেকে হংকংকে ‘সুরক্ষিত’ রাখবে।
এর আগে, গত বছরের ১১ নভেম্বর চীন সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। তাতে বলা হয়— হংকংয়ের স্বাধীনতাকে সমর্থন, চীনের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার, বিদেশিদের অযাচিত হস্তক্ষেপে আহ্বান করলে তা যদি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে একজন আইনপ্রণেতা তার পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। প্রস্তাবে হংকং কর্তৃপক্ষকে আদালতের শরাণপন্ন না হয়েই আইনপ্রণেতাদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়ে।
আইন পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হংকং কর্তৃপক্ষ বিরোধী দলীয় চার সংসদ সদস্যকে বরখাস্ত করে। এর প্রতিক্রিয়ায় চার সহকর্মীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আইনসভার গণতন্ত্রপন্থি বলে পরিচিত বিরোধী দলীয় ১৫ সদস্য পদত্যাগ করেন। ওই সময় হংকংয়ের ৭০ আসনের আইন পরিষদে ২১ জন বিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন। চার জনকে বরাখাস্ত করায় এবং আরও ১৫ জন পদত্যাগ করলে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যের সংখ্যা নেমে আসে মাত্র দুই জনে।